এনআরবিসি ব্যাংকে ত্রিমুখি লড়াই
২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৪ এএম

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ চেতনাধারী এই ব্যাংকটির পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং কোন্দলে মেতে উঠেছে। ব্যাংকটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকলেও পরিচালকদের একটি গ্রুপ প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকের কোন কোন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ফিরিস্তি এনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় দায়ের করতেন। আবার কারো কারো বিরুদ্ধে পোষ্টার ও ব্যানার ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্নস্থানে টাঙ্গিয়ে রাখতেন। আর তাই নিজেদের গ্রপিং-কোন্দলের বিপর্যয়ের মুখে পড়লো ব্যাংকটি। গত ১২ মার্চ মেঘনা ও এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে ভেঙ্গে দেয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ড। এর আগে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য প্রদান, ব্যাংকের পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনসহ বেশ কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বোর্ড থেকে অপসারণ করা হয়। ব্যাংকটিতে বর্তমানে ৩টি গ্রুপ বিদ্যমান। গ্রুপিং-কোন্দলকে নেতৃত্ব দেওয়া একটি গ্রুপে আছেন- পরিচালক আবু বকর চৌধুরী, লকিয়ত উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু, সাইদুর রহমান এবং মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া এক সময়ে জালিয়াতির কারনে ব্যাংকের বোর্ড থেকে বাদ পড়ারাও এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছেন। যারাও আরেকটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। এই গ্রুপে আছেন- ফরাসত আলী, শহীদুল আহসান এবং তৌফিক চৌধুরী। অপর গ্রুপে আছেন- সরওয়ার জামান চৌধুরী, এনায়েত হোসেন এবং তোহেল আহমেদ।
এদিকে আগস্টের পর থেকে ব্যাংকের ভালো গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের টাকা বাধ্য করে আদায় করলেও এখনও সেই ২০১৭ সালের আগে নেওয়া ঋণের একটি টাকাও ফেরত আনতে পারেনি ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকটিতে ক্ষুদ্র গ্রাহকরা ঋণের জন্য গেলে এই নিয়ম, ওই নিয়ম মানতে হয়। শেষ পর্যন্ত ছোট কোন ত্রুটি দেখিয়ে তাদেরকে ঋণ দেওয়া হয় না। আবার পেলেও খেলাপি বানিয়ে তাদেরকে জেলে আটক করা হচ্ছে। অথচ দিনের পর দিন কোন ধরণের কাগজপত্র বা মর্টগেজ না রেখেইে শুধুমাত্র পরিচালকদের ইচ্ছায় শত শত কোটি টাকা লোপাট করছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা ব্যাংকটি।
এনআরবিসি ব্যাংকের সব থেকে খারাপ প্রতিষ্ঠান এজি (আহসান এগ্রো) গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকে হিসাব খোলার আগেই ১৭ ফেব্রুয়ারি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে বেগমগঞ্জ ফিড মিলস লি’-এর নামে ঋণের আবেদন করেন। এটি আহসান গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পরে ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরাসত আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেওয়ান মুজিবর রহমান, ডিএমডি শাফায়েত ওয়াহেদ এবং এনআরবিসি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌফিক রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে ঋণ হিসাব থেকে চলতি হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের পর বিপুল পরিমাণ অর্থ শহীদুল আহসানের মালিকানাধীন এজি এগ্রো ইন্ড্রা. লি.-এর হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এক্ষেত্রে শহীদুল আহসানকে সাহায্য করেছেন ওই সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ মহরম হোসেন। এভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩০১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর ফলে ওই সময়ে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকটি ‘ঝুঁকিগ্রস্ত’ ব্যাংকে পরিণত হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এনআরবিসি ব্যাংক আইন না মেনে শহীদুল আহসানকে ঋণ দিয়েছে, আইন লঙ্ঘন করে বেনামি শেয়ার কিনেছেন শহীদুল আহসান এবং অবৈধভাবে তিনি ব্যাংকটির পরিষদ সভায়ও অংশ নিয়েছেন। এমনকি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাত করেছেন। এনআরবিসি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোন টাকা উঠাতে পারছেনা। এমনকি ব্যাংকটির উর্ধ্বতন ম্যানেজমেন্টের অধিকাংশই শহীদুল আহসানের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের লোক ছিলেন। এনআরবিসি ব্যাংকের খারাপ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে, যমুনা এডিবয়েল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে ২২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে টাকা দিচ্ছে না বা আদায় করা যাচ্ছে না। এছাড়া এনআরবিসি’র মন্দ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে আফতাব গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, সিলভার এ্যাপারেলস লি., ব্লেসিং নিটওয়্যার লি, কালার এন্ড ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি., রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মালিক হাবিব গ্রুপ এবং সাদ মুসা গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানকে ২০১৭ সালের আগে ঋণ দেওয়া হয়। এদিকে গত ৪/৫ মাস ভালো ঋণগ্রহীতার কাছে বাধ্য করে ঋণ আদায় করলেও ২০১৭ সালের আগে নেওয়া বড় ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে একটি টাকাও আদায় করতে পারেনি ব্যাংক। এই সময়ে ভালো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে ২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে পূর্বের যে সব খারাপ ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকটি কোন টাকা আদায় করতে পারেনি। তবে ২০১৭ সালের পরে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া পারটেক্স গ্রুপ থেকেও কোন টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। যদিও ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে কোন সময় এই টাকা পাবেন বলে আশাবাদী ব্যাংক। এদিকে ২০১৭ সালের আগের ঋণের ৯০ শতাংশই এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকটির মাইক্রো ও এসএমই ঋণ আদায় বাড়লেও পূর্বেও ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ায় ফরাছত আলীকে ৪৬ ধারায় অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করা হয়। ওই সময়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এসএম তমাল পারভেজ। এরপর ব্যাংকটি তলানী থেকে ঘুরে দাড়ায়। গত ৮ বছর ব্যাংক ভালো চলছিল। চতুর্থ প্রজন্মের ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলোর তালিকায় প্রথম দিকেই অবস্থান ব্যাংকটির।
কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পলায়নের পর থেকে পরিচালকরা গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। যে কারনে প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকটির কোন না কোন পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায়। এমনকি বিদেশে থাকলেও পরিচালকদেও ইন্ধনে চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও করা হয়েছে। অথচ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পৃষ্ঠপোষকতা করার।
সূত্র মতে, প্রবাসীদের ব্যাংক হওয়ায় তারা বিদেশ থেকে দেশে এসে ব্যাংক পরিচালনা করতো। পরিচালকদের অনেকের ব্যাংক পরিচালনার সঠিক দক্ষতা না থাকায় ব্যাংকটির কর্তৃত্ব চলে আসে শুরু দিকে নিয়োগ পাওয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে যোগদান করা কর্মকর্তাদের হাতে। বর্তমানে যারা ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একসঙ্গে কাজ করতেন। আর তাদের হাতেই দীর্ঘদিন জিম্মি ব্যাংকটি।
এস এম পারভেজ তমাল ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে বিদেশে আছি। তবে দায়িত্বপালনকালে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করেছি। দৈন্যদশা থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক এখন অনেকটা ভালো আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম ব্যাংকের গ্রুপিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এনআরবিসি ব্যাংক বর্তমানে সব সূচকেই খুব ভালো অবস্থানে আছে। ব্যাংকটিকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগীতা কামনা করেন তিনি। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিপিজেএ’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গুরুত্ব দিতে হবে— মাহবুব আলম

গণমাধ্যমকে গুজব ও অপপ্রচার মোকাবিলা করতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা

লক্ষ্মীপুরে টিসিবির পণ্য নিয়ে হুড়োহুড়ি, খালি হাতে ফিরে গেল শতশত শতাধিক নারী-পুরুষ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

পাথর বলবে হে মুসলিম আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়ে আছে তাকে হত্যা কর

শাহতলী পীর সাহেব মাওলানা আবুল বাশারের দাফন সম্পন্ন পীর সাহেব চরমোনাই’র শোক প্রকাশ

মুসলিম বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ হুমকি, শুভেন্দুর মন্তব্যে বিক্ষোভ বিজেপিতে

টি স্পোর্টসসহ অন্যান্য মিডিয়াতে অবৈধ ক্রীড়া সম্প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

কোনো দাবিতেই নির্বাচন বিলম্ব করা হবে না: প্রধান উপদেষ্টা

ঢাকা কলেজস্থ গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ইফতার মহফিল অনুষ্ঠিত

নিলামে রেকর্ড গড়ল মকবুল ফিদা হুসেনের আঁকা ছবি

ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যা বিশ্ব মানবতার জন্য কলঙ্ক বিভিন্ন ইসলামী দলের প্রতিবাদে রাজধানী উত্তাল

সিগারেটের সর্বনিম্ন খূচরা মূল্য ৯ টাকা করার দাবি তরুণদের

ফিলিস্তিনে গণহত্যা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ ঃবাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

শতকোটি টাকার মালিক হয়েও ভাড়া দেওয়া হলো ‘সুন্দর মহল’!

১০ এপ্রিল থেকে ৩৩ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার

ছত্তিসগড়ে সংঘর্ষ, ২২ মাওবাদী ও ১ পুলিশ নিহত

২০২৬ সাল থেকে ৭২৯ স্কুলে ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধের নির্দেশ